ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ব্যস্ততম বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে নেই কোনো যানবাহনের আওয়াজ। থেমে থেমে চলছে দু-একটি রিকশা ও ব্যান। নিরাবতায় আচ্ছন্ন পুরো মহাসড়ক। নোবেল করোনাভাইরাসের কারনে ঝালকাঠিসহ সারাদেশের মানুষ।
নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়াটা বেশ বিপদজনক। এমন মহামারী বিপদের মধ্যেও ভোর থেকে অনায়াসে মাটি আর পানি দিয়ে ইটভাটায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শত শত শ্রমিক। নেই কোন তাদের সেফটি। সাধারণত তারা একটিমাত্র মাক্স ব্যবহারও করছে না তারা।
ঝালকাঠিতে কিছু ইটভাটা সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই মহামারী কে উপেক্ষা করে ভাটার স্তুপ থেকে গুলানো মাটি নিচ্ছেন বেশ কিছু শ্রমিক। সেখান থেকে ট্রলি দিয়ে আবার ইট বানানোর লাইনে মাটি নিচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে ইট বানিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছু শ্রমিক।
এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ইটভাটা শ্রমিকদের। এসময় শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় ইটভাটায়।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন শ্রমিক বলেন, কাজ না করলে কি খাব,আমাদের মালিক পক্ষের কাছ থেকে দাদন নেয়া,আমরা কাজ না করতে পারলে আমাদের বাজার হবে না,আমার সন্তানের মুখেতো আহর দিতে হবে। একদিন কাজে না আসলে ঐধীন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
অপরদিকে আরেক শ্রমিক জানান, শুনেছি দেশে নাকি কি রোগ এসেছে কিন্তু আমাদের তো আর কিছুই করার নেই দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাতে আমাদের একাজ করতেই হবে।
তিনি আরো জানান, সারা বছর এলাকাতে ভ্যান চালাই। কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করি। উপজেলার কৃষ্ণকাঠী গ্রামে এ.আর.এস ইটভাটার মিল সরদার পীযূষ দেবনাথ জানান, প্রতিটি মিলে ১৮ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা থেকে গুলানো মাটি নিয়ে ইট বানানো পর্যন্ত তাদের কাজ। এদের অনেককেই কাজের আগে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনেককেই আবার সপ্তাহ শেষে বেতন দেওয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার মতো বেতন আসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের। তবে যারা ইট বানান তাদের বেতনের চেয়ে একটু বেশি। দরিদ্রতার কারণে ইটভাটায় কাজ করেন এসব শ্রমিকেরা। সারা বছর রিকশা ভ্যান বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া এসব শ্রমিকেরা ইটভাটা থেকে আয়ও করেন বেশ ভালো।
তার কাছে কোন ভাইরাস সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদেরকে সরকার এখনো পর্যন্ত কোন নোটিশ দেয় নাই আমাদের তো কোন কাজ বন্ধ করতে বলা হয়নি এছাড়া আমরা কাজ বন্ধ করতে পারতেছিনা আমরা কাজ বন্ধ করলে শ্রমিকরা কি খাবেন। তার কাছে কাঠ পোড়ানোর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের এখানে কাঠ পোড়ানো হয় না পাশে কিছু কাঠ রাখা আছে যেগুলো শ্রমিকদের রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এছাড়া আমাদের সাথে সাধারন কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়।
এভাবেই চলছে ঝালকাঠি জেলায় বিভিন্ন ক্ষমতার অন্তরালে অবৈধ ইটভাটার ব্যবসা। সত্য ঘটনা লিখতে গেলেও পড়তে হয় হুমকির মুখে।