২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন দিল্লির দঙ্গলে মুখ্য ভূমিকা উত্তর প্রদেশের অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন দিল্লির দঙ্গলে মুখ্য ভূমিকা উত্তর প্রদেশের অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের

ভিডিও: দিল্লির দঙ্গল নিয়ে যা বললেন কাজরেওয়াল- হিন্দুস্তান টাইমসের সৌজন্যে

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দিল্লিজুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবে আহত প্রায় সাত শতাধিক মানুষ এখন হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন। তাদের কেউ গুলিবিদ্ধ আবার কেউ ধারালো অস্ত্র, পাথরের আঘাত বা পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত এসব ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা দেশীয় পিস্তল, তলোয়ার, হাতুড়ি, লাঠি ও বড় বড় পাথর নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশের ধারণা দিল্লির তাণ্ডবে উত্তর প্রদেশ থেকে আনা দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন মুখোশধারী হামলাকারীও উত্তর প্রদেশ থেকে আসার কথা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছে।

 

বিতর্কিত সিএএ ও এনআরসিকে ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দেন বিজেপি নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সহিংসতার উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা।

 

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত এই সহিংসতায় নিহত হয় ৩৪ জন। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতেও চলে সহিংসতা।

 

– জুমা প্রেসের সৌজন্যে

 

সহিংসতায় আহতদের বড় একটি অংশ চিকিৎসা নিচ্ছে গুরু ত্যাগ বাহাদুর হাসপাতাল ও জগ পারভেশ চন্দ্র হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুধবার পর্যন্ত নিহত ২৭ জনের ১৪ জনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

 

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর ও শামলির মতো এলাকা থেকে দিল্লিতে এসে হামলায় অংশ নিয়েছে অনেকে। দিল্লির জাফরাবাদের মধ্যমসারির এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তের অংশ বিশেষ রোববারই (২৩ ফেব্রুয়ারি) বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিলো। ৪০ ঘণ্টারও বেশি তাণ্ডব চলার পর শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ করার পর প্রথম দিনে তাণ্ডব আর বাড়েনি। দিল্লিতে ব্যবহৃত হওয়া সব অবৈধ পিস্তল উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছে বলেও জানায় ভারতিয় গণমাধ্যম।

 

পুলিশি রেকর্ডেও দেখা গেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অপরাধী চক্রের হাতে সহজেই অস্ত্র পৌঁছায়। পুলিশি তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তর প্রদেশের মিরাট, শামলি ও মুজাফফরনগরের মতো পশ্চিমাংশে একটি দেশীয় অস্ত্র বিক্রি হয়েছে তিন থেকে পাঁচ হাজার রুপিতে। আর এসব এলাকায় অটোমেটিক পিস্তল বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার রুপিতে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া সবচেয়ে বেশি যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো পাথর। পাথরের আঘাতে মারা যান দিল্লি পুলিশের হেড কনেস্টবল রতন লাল (৪২)। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অমিত শর্মার মাথায়ও পাথরের আঘাত লেগেছে।

 

পাথর নিক্ষেপে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হামলার সময়ে ট্রাক ভর্তি করে আনা হয়েছে পাথর। মৌজপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘তারা সবাই বহিরাগত। আমরা তাদের ভিডিও ধারণ করেছি। এটা ছিল পরিকল্পিত হামলা’।

 

 

তাণ্ডব কবলিত জাফরাবাদ নতুন সড়কের রোড ডিভাইডার ভেঙে ফেলে পাথর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার বেড়া খুলে রড বের করে হামলা চালানো হয়েছে।

 

দিল্লির তাণ্ডবে ব্যবহার হয়েছে তলোয়ার ও পেট্রোল বোমাও। চান্দ বাগ এলাকাতে হামলাকারীরা বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছে। পুলিশের বিশ্বাস স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ খালি বোতল সংগ্রহ করে হামলাকারীরা।

 

তিন দশক ধরে দিল্লিতে কাজ করেছেন সাবেক ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এলএন রাও। দিল্লির তাণ্ডবের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, উত্তর-পূর্ব এলাকার তরুণদের বড় একটি অংশই বেকার। তিনি বলেন, এসব তরুণেরা মানুষের কাছে ডাকাতি করতে ধারালো অস্ত্র ও ছুরি ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না। আর খুব সহজেই এই গোষ্ঠীটিকে ব্যবহার করা হিয়েছে এমন তাণ্ডব সৃষ্টিতে।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30