২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বীর টাইগাররা আসছে বুধবার আনন্দের জোয়ারে ভাসছে দেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
বীর টাইগাররা আসছে বুধবার আনন্দের জোয়ারে ভাসছে দেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা
এমন উল্লাস তো মানায় তাদেরই। ছবি : আইসিসি
জাতীয় বীরদের ফেরার অপেক্ষায় গর্বিত জাতি

 

সুদীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর পর আবারো এক গণসংবর্ধনা দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশের আপামর জনগণ। ১৯৯৭ সালের ১৪ এপ্রিল ছিল পহেলা বৈশাখ। সেদিন বাঙালির উৎসবের ঢল যতটা না নেমেছিল রমনার বটমূলে, তার চেয়েও ঢের বেশি নেমেছিল ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে। কারণ এর আগের দিন শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনালে শেষ বলের নাটকে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জিতে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিল আকরাম-নান্নু-বুলবুল-রফিকরা। তাদেরই উত্তরসূরিরা আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জানান দিয়েছে, উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে যাওয়া ক্রিকেটটা জ্বলে-পুড়ে যতই ছারখার হোক; তবু মাথা নোয়াবার নয়।

 

সব চোখে স্পষ্ট ভেসেছে বিশ্বজয়ের আনন্দ। ছবি : আইসিসি  

 

 

সেদিন পল্টনে নেমেছিল বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠা জনতার স্রোত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দেশ বরেণ্য অনেকেই টাইগারদের দেয়া গণসংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের সকালটা যেন সবার হৃদয়ে বাজিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সেই গান- ‘এ দিন আজি কোন ঘরে গো. খুলে দিল দ্বার। আজি প্রাতে সূর্য ওঠা, সফল হল কার।’ সফল হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট, সফল হয়েছিল সেই দেশের মর্যাদা যাদের নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর রাজনৈতিক গোলযোগ ছাড়া আর কোনো শিরোনাম বিশ্ব গণমাধ্যমে খুঁজেই পেতো না। আর তারাই কি না টাইগারদের ক্রিকেটীয় অর্জনকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে তখন মোটেও কার্পণ্য করেনি।

 

 

এবার অবশ্য পল্টনে নয়, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির প্রাণের মিলনমেলা হতে চলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যার নাম আগে ছিল রেসকোর্স ময়দান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এখানেই দাঁড়িয়ে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালিকে তার বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। তার সেদিনের সেই ভাষণ যেন মাঠের খেলাতেও বাংলার দামাল ছেলেরা প্রমাণে ছিল মরিয়া। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রাঙিয়ে, বল হাতে ও ফিল্ডিংয়ে তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন চুম্বক গতিতে ছুটছে তাদের শরীর। ব্যাট হাতে ভালো শুরুর পর বিপর্যয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়াতে হয় কীভাবে, তাও যেন ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়ে ছাড়ল ইমন-আকবররা।

 

হাস্যেজ্জ্বল চেহারায় ফাইনালের নায়ক। ছবি : আইসিসি

 

বাঘ শাবকদের এমন কীর্তি গড়া নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেই দিলেন, মুজিববর্ষের প্রথম উপহার বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শিরোপা জয়। যুবা টাইগাররা দেশে ফিরলেই তাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। তার খানিকপর সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,  রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলটি ঢাকায় ফিরে এলেই বড় ধরনের উদযাপন করা হবে। উদযাপন অবশ্য রাকিবুলের জয়সূচক রান নেয়ার পরই একদফা হয়েছে। ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান বিশপ ভবিষ্যৎবাণী করেই দিয়েছিলেন ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী উৎসবের নগরী হবে’। আসলেই তাই তবে সেই উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশের আনাচে-কানাচে। আবারো হবে, শুরু জাতীয় বীরদের ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে গর্বিত জাতি।

 

জাতীয় ক্রিকেট দলের সিনিয়র সদস্যদের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন তরুণ টাইগাররা। ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, তোমার কাছ থেকে শিখলাম, কী করে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আবেগি মুশফিক বলে ওঠেন, মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই বলতে পারি, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন আমি একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। এই ছেলেগুলো আমাকে সারাজীবনের জন্য গর্বিত করেছে।

 

জয়ের মুহূর্ত। 

 

বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস চ্যাম্পিয়ন দলের প্রশংসা করার পাশাপাশি অধিনায়ক আকবর আলীর প্রশংসা করে বলেছেন, দলের কঠিন পরিস্থিতিতেও সে দেখিয়েছে কীভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ম্যাচ বের করে আনতে হয়।

 

বিজয় অর্জনের আনন্দের মাঝে থাকে চরম আত্মত্যাগ ও বেদনার গল্প। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আকবর বিশ্বকাপ চলাকালীন নিজের বোনের মৃত্যু সংবাদ পেয়েও নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সরে না গিয়ে দলের সঙ্গে থেকে নিজের নেতৃত্বগুণ দেখিয়ে ছাড়লেন। তিনি যেন আরেক ক্যাপ্টেন কুলের আবির্ভাবকেই জানান দিলেন। কয়েকদিন আগে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়া এবং অবসরের কাছাকাছি চলে যাওয়া মহেন্দ্র সিংকে তবে কি আকবর এটাই বোঝাতে চাইলেন- আমার হলো শুরু, তোমার হলো সারা! অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে ফাইনাল জয়ের নায়কের ট্রাজিক ঘটনা থাকলেও নিজের আবেগ বধ করে ঠিকই তিনি বারবার ফাইনালে হেরে যাওয়ার ট্র্যাজিডি থেকে বাংলাদেশকে বের করে শুধুই জয়ের বন্দরেই নিলেন না, হাতে তুলে নিলেন বিশ্বকাপ ট্রফি।

 

বিশ্বকাপ জয়ের ভাগিদারদের একাংশ। 

 

শৈলী শানিত বাংলাদেশের যুবা ক্রিকেটাররা শীতল মেজাজ আর পাথুরে হৃদয় নিয়ে খেলে সবাইকে রাজপথের মিছিলে নামিয়ে ছেড়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার তাদের ঘিরে হতে যাওয়া গণসংবর্ধনা তো জনসমুদ্র হতে যাওয়া এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র। ম্যাচের আগের দিন উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা বা উৎসাহ কোনোটারই কমতি থাকে না। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে উত্তেজনার পারদ আকাশকে ভেদ করতে থাকে। আর বিজয় অর্জনের পর তাকে সার্থক করার মিশনে নামতে হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় আগামীর পথ চলা। আইসিসি ট্রফি জয়ী অধিনায়ক এবং ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানের ভাষ্য, যুবারা বিশ্ব জয় করেছে। বিশ্বকে দেখিয়েছে, আমরাও পারি। তবে এটা যে গল্পের শুরু। লাল সবুজের এ সাফল্য পূর্ণতা পাবে জাতীয় দলও যদি বিশ্ব জয় করে। তবে যুবারা যে পথ দেখিয়েছে তাতে বিসিবির স্বপ্নে রঙ ছড়িয়েছে। সাহস বেড়েছে। এখন তাই বলাই যায়, আকবর, শরিফুলরা যখন বাংলাদেশের দায়িত্ব নেবে। তখন স্বপ্নরাও ধরা দেবে। তারা প্রমাণ করেছে যে তারাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। তাদের যদি গাইড করা যায়, এরাই একদিন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্ব জয় করবে।

 

প্রত্যাশার বেলুন ফলানো টাইগারদের এবার দেশে ফেরার পালা। সবকিছু ঠিক থাকলে ১২ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আগামী বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশ দলকে নিজেই বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারো তেমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। ফাইনালের আগে দলকে বঙ্গবন্ধুকন্যার পাঠানো বার্তায় চাঙ্গা হওয়া বাঘেরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং স্নেহের ছোঁয়া মাথা পেতে নিতেই প্রস্তুত আছে। আর কোটি জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হতে তাদের নিজেদের আর তর সইছে না। নতুন বীরদের নিয়ে ওড়ানো কেতন আর বিজয়ের কালবৈশাখী ঝড়ের মাঝে বুক চিতিয়ে বাঙালির জয়ধ্বনি শুনতে আর কান পাতছে না বিশ্ব, বিদ্যুৎ গতিতে হুংকার দিয়ে আকাশে-বাতাশে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সৃষ্টি সুখের উল্লাসের প্রতিধ্বনি।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30